সব
৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন(বাফুফে)’র কাছে ২৫ বছরের জন্য লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ৩ ফেব্রুয়ারি,সোমবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন থেকে ক্রীড়া সংগঠক,ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়ামোদীরা স্টেডিয়াম লিজ বাতিলের জোর দাবি জানান।
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার(সিজেকেএস)আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন,এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন সংকটে পড়বে এবং বহু খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠনের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।
এম.এ.আজিজ স্টেডিয়ামকে সব ধরনের খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত রাখার আহ্বান জানান এবং ফুটবলের জন্য পৃথক স্টেডিয়াম নির্মাণের দাবি তোলেন।স্টেডিয়াম লিজ দেওয়ার বিরোধিতার কারণ জানিয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন,এম.এ.আজিজ স্টেডিয়াম চটলার ক্রীড়া সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।এতে ক্রিকেট, হকি,ভলিবল,বাস্কেটবল,অ্যাথলেটিকস সহ প্রায় ৩০ (ত্রিশ)টি ইভেন্টের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এই স্টেডিয়ামের সঙ্গে চট্টগ্রামের ক্রীড়া ঐতিহ্য ও ইতিহাস গভীরভাবে যুক্ত।এখানে অনুশীলন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহু খেলোয়াড় সাফল্য অর্জন করেছেন।তারা আরও বলেন,এটি শুধু একটি খেলার জন্য বরাদ্দ করা হলে অন্যান্য খেলাধুলা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে,যা চট্টগ্রামের ক্রীড়া উন্নয়নের জন্য বড় ধাক্কা হবে। ক্রীড়া সংগঠকদের দাবি- ১.স্টেডিয়াম লিজ বাতিল: এম.এ.আজিজ স্টেডিয়াম শুধুমাত্র ফুটবলের জন্য বরাদ্দ না দিয়ে আগের মতো সব খেলার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
২.চট্টগ্রামে ফুটবলের উন্নয়নের জন্য আলাদা একটি আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হোক।
৩. সিজেকেএসের অধীনেই স্টেডিয়ামের ব্যবস্থাপনা: চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে স্টেডিয়ামের পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে।৪. ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ: জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে।স্টেডিয়াম লিজ দিলে কী ক্ষতি হবে? ক্রীড়া সংগঠকরা বলেন, এম.এ. আজিজ স্টেডিয়ামে সরাসরি খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৭,০০০ (সাত হাজার) খেলোয়াড়, কোচ ও ক্রীড়া সংগঠক রয়েছেন।
এছাড়া,চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্লাব ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্রীড়া কার্যক্রমের জন্য এই স্টেডিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্টেডিয়াম লিজ দেওয়া হলে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন সংকটে পড়বে এবং তরুণ প্রজন্ম খেলাধুলা থেকে দূরে সরে যেতে পারে,যা তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিকল্প প্রস্তাব-সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ফুটবলের জন্য পৃথক একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম নির্মাণ করা যেতে পারে।তারা বাংলাদেশ রেলওয়ের পলোগ্রাউন্ড মাঠ, জঙ্গল সলিমপুর বা কর্ণফুলী টানেলের অপর প্রান্তকে সম্ভাব্য স্থান হিসেবে বিবেচনার অনুরোধ জানান।
চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকরা আশা প্রকাশ করেন,সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে এবং চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।ক্রীড়া সংগঠক ও সাংবাদিক হিসেবে প্রতিবেদকের মন্তব্য-যে,
চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন দীর্ঘদিন ধরে দেশের ক্রীড়া ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।এম.এ.আজিজ স্টেডিয়াম শুধু ফুটবলের জন্য নয়,অন্যান্য ইভেন্ট যেমন -হকি,হ্যান্ডবল,এথলেটকস সহ প্রায় ৩০টিরও বেশি খেলাধুলার কেন্দ্রবিন্দু।এমন একটি বহুমুখী ক্রীড়া স্থাপনাকে শুধুমাত্র ফুটবলের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের(বাফুফে)কাছে ২৫ বছরের জন্য লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত চট্টগ্রামের ক্রীড়ামোদীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে ফুটবলের উন্নয়ন হতে পারে,কিন্তু অন্য সব খেলাধুলা চরম সংকটে পড়বে।
চট্টগ্রামের হাজারো ক্রীড়াবিদের অনুশীলন বাধাগ্রস্ত হবে, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন ব্যাহত হবে,এবং ক্রীড়াঙ্গনের সামগ্রিক বিকাশের পথে বড় বাধা সৃষ্টি হবে।একসময় যে স্টেডিয়াম থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের অসংখ্য খেলোয়াড় উঠে এসেছে,সেটি যদি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট খেলার জন্য সীমাবদ্ধ করা হয়, তাহলে তা সামগ্রিক ক্রীড়া উন্নয়নের জন্য একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের উচিত বিকল্প সমাধান খোঁজা।ফুটবলের জন্য আলাদা স্টেডিয়াম নির্মাণ করা যেতে পারে,যেমনটি বিশ্বের উন্নত ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার দেশগুলো করে থাকে।এম.এ.আজিজ স্টেডিয়াম লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা দরকার।এটি শুধুমাত্র ক্রীড়ামোদীদের আবেগের বিষয় নয়,বরং চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংস্কৃতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
একক সিদ্ধান্তের বদলে সব পক্ষের মতামত নিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও যৌক্তিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন প্রবীণ ক্রীড়া সংগঠক ও আয়োজকরা।
মন্তব্য